ঠাট্টা করছেন, তাই না ফাইনম্যান? - ০৩

পৃষ্ঠা - ০৩

হরেকমালের দোকান থেকে আমি অনেকগুলি রেডিও কিনেছিলাম। আমার বেশি টাকা ছিল না, কিন্তু পুরাতন নষ্ট রেডিওগুলো সস্তায় পাওয়া যেত। আমি সেগুলো কিনে ঠিক করতে চেষ্টা করতাম। সাধারণতঃ এগুলো ঠিক করা বেশ সোজা ছিল – হয়ত একটা তার খোলা থাকত বা একটা কয়েল পোড়া থাকত বা কয়েলের অংশবিশেষ খোলা থাকত – ফলে আমি বেশ সহজেই কিছু নষ্ট রেডিও ঠিক করে ফেলতে পারতাম। এগুলোর একটা দিয়ে আমি টেক্সাসের ওয়াকো রেডিও ধরতে পেরেছিলাম – আহা!

এই একই রেডিওতে আমি স্ক্যনেকট্যাডি শহরের রেডিও স্টেশন, ডব্লিউ জি এন শুনতে পারতাম। তখন আমরা বাচ্চারা – আমার বোন, আমা চাচাতো/খালাতো ভাইবোনেরা এবং আমাদের পাড়ার বাচ্চারা – নিচতলায় বসে ‘ইনো ক্রাইম ক্লাব’ নামের একটা ধারাবাহিক নাটক শুনতাম। তখনকার দিনে এটাই ছিল বাচ্চাদের ধ্যানজ্ঞান। তো যাহোক, একদিন আমি আবিষ্কার করলাম, এই নাটকটা ডব্লিউ জি এন চ্যানেলে নিউইয়র্কের ১ ঘন্টা আগেই প্রচারিত হয়। কাজেই, অন্য সবাই শোনার ১ ঘন্টা আগেই আমি ল্যাবে বসে আমার রেডিওতে নাটকটি শুনে ফেললাম। আর যখন সবাই ‘ইনো ক্রাইম ক্লাব’ শোনার জন্য নিচতলায় জড় হল আমি তখন বললাম, “দেখ, অমুক চরিত্রটা অনেকদিন ধরেই নাটকে আসছে না, আমি বাজি ধরে বলতে পারি আজ সে এসে বিপদ থেকে উদ্ধার করবে।”

দুই সেকেন্ড পরেই, বুপ-বুপ, সেই চরিত্রটা চলে এল! আর আমার ভবিষ্যতবাণী নিয়ে সবার মধ্যে একটা তোলপাড় হয়ে গেল। পরে আমি আরো দু-একটা ভবিষ্যতবাণী করলাম। আর তাতেই তারা বুঝে গেল যে নিশ্চয়ই কোন একটা চালাকি আছে – আমি নিশ্চয়ই কোনভাবে আগেভাগে জেনে ফেলেছি। পরে আমি ওদের সব খুলে বললাম।

তারপরে কি হল, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। তারা আর ১ ঘন্টা দেরি করে নাটক শুনতে রাজী নয়। তারপর থেকে তারা সবাই দোতলায় আমার ল্যাবে এসে ভাঙ্গাচোরা রেডিওতে ‘ইনো ক্রাইম ক্লাব’ শুনত।

ওই সময়ে আমরা একটা বড় বাড়িতে থাকতাম; এই বাড়ীটা আমার দাদু তাঁর ছেলেদের দিয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর ছেলেদের বাড়ি ছাড়া আর তেমন কোন সম্পদ ছিল না। বিশাল এই কাঠের বাড়িটার চারপাশে আমি তার টানিয়েছিলাম আর সব ঘরেই প্লাগ ছিল। ফলে আমি সবসময়ই দোতলায় ল্যাবে রাখা রেডিও শুনতে পারতাম। আমার একটা লাউডস্পিকারও ছিল – পুরোটা না, হর্ন ছাড়া বাকি অংশটা ছিল।

একদিন আমি এয়ারফোনটা কানে লাগিয়ে তারসাথে লাউডস্পিকারটা কানেকশন দিতেই একটা মজার জিনিস আবিষ্কার করলামঃ আমি স্পিকারে আঙ্গুল রাখলাম, সাথেসাথে তার শব্দ এয়ারফোনে শুনতে পেলাম; তারপর স্পিকারে আঙ্গুল দিয়ে আঁচড় কাটলাম, সেই শব্দও এয়ারফোনে শুনতে পেলাম। তারমানে, স্পিকারও মাইক্রোফোনের মত কাজ করতে পারে। এমনকি এরজন্য ব্যাটারীও দরকার হয়না। স্কুলে যখন আমরা আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলকে নিয়ে কথা বলছিলাম, তখন আমি এই পরীক্ষাটা সবার সামনে করে দেখিয়েছিলাম।

(চলতে পারে)

Comments