ঠাট্টা করছেন, তাই না ফাইনম্যান? - ০১

মূল: Surely You’re Joking, Mr. Feynman! – Richard Feynman

রিচার্ড ফাইনম্যান (মে ১১, ১৯১৮ – ফেব্রুয়ারি ১৫, ১৯৮৮)ঃ বিখ্যাত আমেরিকান তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী। কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডাইনামিক্সে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৬৫ সালে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।

তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে লেখা "Surely You're Joking, Mr. Feynman!" বইয়ের বাংলা অনুবাদ এই লেখাটি।

প্রথম পর্বঃ সুদূর রকএ্যাওয়ে থেকে এম, আই, টি

ও রেডিও ঠিক করে চিন্তা দিয়ে

পৃষ্ঠা - ০১

এগারো/বারো বছর বয়সে আমি বাসায় একটা পরীক্ষাগার বানিয়েছিলাম। পরীক্ষাগারের মূল কাঠামো ছিল একটা কাঠের বাক্সের ভিতরে রাখা কতগুলি তাক। আমার একটা হিটার ছিল, সেখানে আমি আলু আর চর্বি দিয়ে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বানাতাম। আর ছিল একটা ব্যাটারি এবং একটা বাল্ব ব্যাংক।

বাল্ব ব্যাংকটা বানিয়েছিলাম কয়েকটা বাল্ব-সকেটকে একটা কাঠের পাটাতনে স্ক্র দিয়ে লাগিয়ে। আমি জানতাম তার এবং সুইচ বিভিন্নভাবে জোড়া লাগিয়ে আমি বিভিন্ন ভোল্টেজ বানাতে পারব। কিন্তু আমি জানতামনা যে বাল্বের বৈদ্যুতিক রোধ তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। ফলে বাল্ব ব্যাংক সার্কিট থেকে পাওয়া ভোল্টেজ আমার হিসেবের সাথে মিলত না। কিন্তু তাতে কি? সিরিজে লাগানো বাল্বগুলি থেকে যে সুন্দর, অনুজ্জ্বল দ্যুতিটা বের হত, সেটা ছিল দেখার মত।

আমি এই যন্ত্রে একটা ফিউজও লাগাতে চেয়েছিলাম। যেন উল্টাপাল্টা শর্টসার্কিট হলে ফিউজটা পুড়ে যায়। কিন্তু বাসার প্রধান ফিউজের চেয়ে দুর্বল একটা ফিউজ আমার দরকার ছিল। কোথায় পাই সেটা? একটা বানিয়েই ফেললাম। একটা নষ্ট ফিউজের সকেটের চারদিকে পতলা টিনের পাত পেঁচিয়ে তৈরি হল আমার একেবারে নিজস্ব ফিউজ। সেই ফিউজের সমান্তরালে লাগালাম একটা পাঁচ ওয়াটের বাল্ব। ফলে, যখনই ফিউজটা পুড়ে যেত, সাথেসাথে বাল্বটাও জ্বলে উঠত। বাল্বটা ছিল সুইচবোর্ডের উপর একটা বাদামী কাগজে মোড়া, জ্বললেই লাল টকটকে একটা আলো বের হত। উল্টাপাল্টা কিছু হলে সুইচবোর্ডের দিকে তাকালেই লাল রংয়ের আলোটা দেখতে পেতাম। ওখানেই আছে আমার পোড়া ফিউজ। মজাই মজা।

আমি রেডিও শুনতে পছন্দ করতাম। শুরু করেছিলাম একটা কেনা ক্রিস্টাল রেডিও দিয়ে। একটা এয়ারফোন কানে লাগিয়ে রেডিও শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তাম। আর বাবা-মা বাইরে গেলে গভীর রাতে বাড়ি ফিরে আমার ঘরে এসে এয়ারফোনটা খুলে দিত। আমার ছোট্ট মাথায় যে কী খেলা করে সেটা ভেবে তাঁদের দুঃশ্চিন্তার কোন শেষ ছিল না।

এরকম সময়ে আমি একটা চোর ধরার যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলাম। জটিল কিছু না – একটা বিশাল ব্যাটারীর সাথে একটা বৈদ্যুতিক ঘন্টা তার দিয়ে জোড়া দেওয়া। কেউ দরজাটা খুললেই সেটা তারটাকে ব্যাটারীর সাথে চেপে ধরত আর ঘন্টাটা তখন বেজে উঠত।

এক রাতে আমার বাবা-মা বাইরে থেকে বাসায় ফিরলেন। তারপর আমার এয়ারফোন খোলার জন্য তাঁরা নিঃশব্দে, চুপিচুপি আমার দরজা খুললেন যেন আমি জেগে না যাই। হঠাৎ বিকট শব্দে আমার চোর ধরার ঘন্টা বেজে উঠলো – বং বং বং বং বং। আর আমি বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে আনন্দে চিৎকার দিলাম, “কাজ করেছে! কাজ করেছে!!”

Comments